নারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা - নারিকেল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা প্রায় সবাই শরীর সুস্থ রাখার জন্য নারিকেলের পানি খেয়ে থাকি।নারিকেল পানি খেলে আমাদের শরীরের পানির স্বল্পতা থেকে রক্ষা করে ও আরো অনেক উপকার করে। আজকে আমরা এ আর্টিকেলে নারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নারিকেল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
নারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা


নারিকেলের পুষ্টিগুণ

নারিকেল একটি লম্বা গাছ, এটি শাখাবিহীন,সরু, প্রলেপযুক্ত এবং পাতাগুলো বড় হয়।এই গাছটিতে ড্রপ ধরনের ফল হয়।এই ফলটি শক্ত হয়, কিন্তু এই শক্ত অংশের ভিতরে পানি থাকে এবং দুধের মত সাদা অংশও থাকে।এই ফলটির অনেক পুষ্টিগুণ আছে তা এখন আমরা জানবো নিচে-
  • এই ফলের শাঁসে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। 100 গ্রাম রয়েছে ৩৫৪ ক্যালোরি, স্নেহ পদার্থ ৩৩ গ্রাম,সোডিয়াম ২০ মিলিগ্রা্ম, কার্বন-হাইড্রেট ১৫ গ্রাম,পটাশিয়াম ৩৫৬ মিলিগ্রাম, এবং আমি ৩.৩ গ্রাম থাকে এই ফলটিতে। এগুলো ছাড়াও আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ রয়েছে।
  • কোমল রাখে ত্বক।
  • চুলকে সুন্দর ও ভালো রাখতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। চুলের খুশকি ও শুষ্কতা এবং চুল পড়া বন্ধ হয় নারিকেলের শাঁস খেলে।
  • কর্ম উদ্দীপনা সঠিক রাখতে বা কাজের মাঝে ক্লান্ত লাগলে নারিকেলের পানি ও নারিকেলের শাঁস তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের শক্তি বাড়ায় কারণ নারিকেলে অতিরিক্ত ক্যালরি আছে।
  • এই ফলটিতে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে কোলেস্টেরলবৃদ্ধি না করে বরং আথেরোসক্লোরোসিসের এর ঝুঁকি কমিয়ে হার্ডকে রক্ষা করে।
  • এই ফল নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিনকে।যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের এই ফলটি শরীরের ক্ষতিরোধ করে এবং রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • নারিকেলের শাঁস খেলে ক্ষুধা পায় না। এক্ষেত্রে এ ফলটি ওজন বাড়াতে দেয় না। অল্প ক্যালাতে মেটাবলিজম বৃদ্ধি হয় এজন্য তাৎক্ষণিকে শরীলে শক্তি পায়।
  • হাড়ের ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম সঠিক পরিমাণ থাকতে সাহায্য করে নারিকেল এবং সঠিক গঠনে হাড়ে ও দাঁতে ভূমিকা আছে এই ফলের।
  • ভিটামিন, এমিনো এসিড ও মিনারেল শোষন করে নিয়ে হজম শক্তিতে সাহায্য করে।
  • নারিকেলের দুধ লিভারের অসুখে, জন্ডিস এবং হেপাটাইটিস সি রোগ গুলোকে ভালো করে দেয়। অন্যান্য কোলন ক্যান্সার, বেস্ট ক্যান্সার ও কিছু আরো ক্যান্সারের অনেকখানি ঝুঁকি আর থাকে না। সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এই ডাবের পানিতে রয়েছে। যেটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

নারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

উপকারিতা

আমাদের প্রত্যেকটি মানুষেরই এই নারিকেল ফল খেতে ভালো লাগে এবং অনেকেরই এটি একটি প্রিয় ফল।এই ফলটি মানুষের শরীরকে সতেজ করে এবং শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।আমরা অনেকে মনে করি নারিকেলে তেমন কোন গুণ বা পুষ্টি নেই। কিন্তু চিকিৎসকেরা শরীরে দুর্বলতা, ডায়রিয়া ও আরো অনেক এমন রোগ আছে যেগুলো দেখলে তখন এই নারিকেল ফলটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তবে আমরা অনেকেই এই ফলটি ভুল নিয়মে খেয়ে ক্ষতি করে নিয়ে বসে থাকি। এইজন্য এই আর্টিকেল থেকে আজকে আমরা নারিকেলের উপকারী ও অপকারিতা সম্পর্কে জানব।
ওজন কমায়ঃআমাদের ওজন কমাতে নারিকেল ফলের একটি বিশেষ ভূমিকায় রয়েছে। কারণ এই ফলটিতে অল্প ক্যালোরিতে মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং শক্তি যোগায় শরীরে, এতে করে ক্ষুধা খুবই কম লাগে তখন এমনিতে ওজন কমে।
শক্তি যোগায়ঃ নারিকেলে পাওয়া যায় ক্যালরি এবং সেটি মানুষের শরীরে শক্তি যোগায়। তাই মানুষ যখন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় তখন নারিকেল পানি খাওয়া উচিত।
হার্টের সুস্থ রাখেঃনারিকেলের পানি হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নারিকেলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড সেটি কোলেস্টেরল বৃদ্ধি না করে হার্টকে সুরক্ষা করে।
ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করেঃযাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ইনসুলিন সঠিক রাখতে এই ফলটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এবং ডায়াবেটিসদের যদি কোন জায়গা কেটে যায় সে জায়গায় কোন সমস্যা যাতে না হয় সেই ক্ষতস্থানটি ভালো রাখে।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃভিটামিন, মিনারেল ও অ্যামাইনো এসিড শোষণ করতে সাহায্য করে এই ফলটি। এজন্য হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এই নারিকেলের পানি খেলে।
দাঁত ও হাড় মজবুত করেঃনারিকেলেতে আছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম সেটি হাড়ের জন্য খুবই ভালো এবং দাঁতের গঠনের জন্য ভালো।এছাড়া নারিকেল বেশিভাগ রোগের ওষুধ হিসেবে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেয়।
সবশেষে বলা যেতে পারে, নারিকেল ফলটি খুবই উপকারী একটি ফল। শীতের সময় গ্রামের বাসায় বিভিন্ন পিঠা তৈরিতে নারিকেলের বিশেষ ভূমিকা থাকে। আমরা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এই নারিকেল ফলটি রাখলে বিভিন্ন পুষ্টি উপকারিতা পেয়ে যাব।

নারিকেলের অপকারিতা

নারিকেল ফলটি আমরা প্রত্যেকটি মানুষের কাছে একটি সুপরিচিত ফল। নারিকেলের পানি, গুড়ি ও তেলের কাজে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া অনেক ধরনের খাবার তৈরি এবং মিষ্টি তৈরিতে এই নারিকেলের ব্যবহার হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক সুন্দর ফল হিসেবে পরিচিত। তবে এই ফলের কিছু সমস্যা ও অপকারিতা রয়েছে। নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
মধু্মাক্ষিকতাঃযদি মানুষ এই ফলটি অধিক পরিমাণে খেয়ে ফেলে তবে মানুষের মধুমাক্ষিকতা ওপেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ নারিকেলে অধিক মাত্রার তেল রয়েছে।
প্রতিরোধশীলতাঃপ্রত্যেকটি মানুষেরই এই ফলটি পছন্দ নাও হতে পারে। কারণ অনেক মানুষেরই নারিকেলে এলার্জি আছে এবং সেটি চোখ,ত্বক ও হাঁটুর ব্যথার সমস্যা হয়।
উচ্চ কোলেস্টেরলঃনারিকেলে পাওয়া যায় স্যাটুরে্টেড ফ্যাট, যেটি কোলেস্টেরল স্তর বৃদ্ধি হতে পারে।
অতিরিক্ত ক্যালরিঃঅতিরিক্ত মেদ ও ওজন বাড়াতে পারে কারণ নারিকেল অধিক পরিমাণে ক্যালরি আছে।
উপরের এগুলো অতি সামান্য কিছু সমস্যা, এ সমস্যাগুলো প্রত্যেকটা মানুষের নাও হতে পারে তবে যাদের এই সমস্যাগুলো হয় নারিকেল খাওয়ার পরে তারা যেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ফলটি খায়।

নারিকেল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা অনেকেই রান্নায় নারিকেলের তেল ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু আমরা জানিনা যে এটি কতটুকু ভালো আমাদের জন্য। তাই আজকে আমরা নারিকেল তেলের উপকারিতা এবং ক্ষতি সম্পর্কে জানব।

নারিকেল তেলের উপকারিতা

নারিকেলের ফলের সাদা অংশ থেকে এই তেলটি হয় জয়া এক ধরনের উদ্ভিদ তেল। একটি প্রসাধুনিক পণ্য এবং একটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ওজন কমাতে এই তেলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কারণ এই তেলে এক ধরনের স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় সেটা স্বাস্থ্যকর চর্বি।
নারিকেল তেলের ২০টি সুবিধা বর্ণনা করা হলো-
  • ওজন কমাতে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে নারিকেল তেলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
  • এটি পূর্ণতা ও ক্ষধা কমাতে সাহায্য করে।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে এ নারিকেল তেল সাহায্য করে।
  • শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
  • স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় ফাংশন সঠিক রাখতে নারিকেল তেলের উপকার রয়েছে।
  • অকাল বাধ্যক্য ও ত্বকের ক্ষতি দিক থেকে সাহায্য করে এই নারিকেল তেল।
  • চুল ও ত্বক ময়শ্চারাইজ করে এই নারিকেল তেল।
  • ত্বকের অন্যান্য সমস্যা ও ব্রণ চিকিৎসার একটি বিশেষ গুণ হল নারিকেল তেল।
  • রোদে পুরা ত্বককে সুন্দর করতে নারিকেল তেল সাহায্য করে।
  • চুল স্বাস্থ্যকর ও চকচক রাখতে এবং চুলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে নারিকেল তেলের অনেক উপকার রয়েছে।
  • চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নারিকেল তেলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
  • ছত্রাক ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সাহায্য করে।
  • পেটের আলসার ও হজম উন্নত করতে নারিকেল তেল সাহায্য করে।
  • আমাদের শরীরে কর্মক্ষমতা এবং শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার ও রান্নার তেল হিসেবে নারিকেল তেলের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।এছাড়া চুল ও ত্বক সুন্দর করতেও সাহায্য করে।

নারিকেল তেলের অপকারিতা

অলৌকিক তেল বা সুপার ফুড হিসেবে নারিকেল তেলকে প্রাইস চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এই তেলটি অনেক অসুবিধা আছে সেটি আমাদের এই তেল ব্যবহারে আগে চিন্তা করতে হবে।
নারিকেল তেল প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকেঃকোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে এই চর্বি। কারণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট হল এক ধরনের চর্বি যেটি ঘরের তাপমাত্রা শক্ত থাকে।
নারিকেল তেল আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারেঃহৃদরোগের সমস্যা হতে পারে কারণ এই তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে।
নারিকেল তেল ওজন বৃদ্ধি প্রচার করতে পারেঃকেন এগুলি ১০০% চর্বি থেকে আসে এবং নারিকেল তেলে ক্যালোরি বেশি।আমরা যদি নারিকেল তেল একটু বেশি পরিমাণে খাই তবে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
নারিকেল তেল ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ করতে পারেঃনারিকেল তেলে ইনসুলিন প্রতিরোধকে খারাপ করে,এজন্য ডাক্তাররা এই তেলটি খাওয়ার পরামর্শ দেয় না।
নারিকেল তেল কিছু ধরনের ডিমেনশিয়াকে খারাপ করতে পারেঃঅ্যামাইলয়েড বিটা হল আলঝেইমার রোগের একটি প্রোটিন যে রোগের বিকাশে সাথে যুক্ত। এটি মস্তিষ্কে মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
নারিকেল তেল প্রদাহ প্রচার করতে পারেঃএক ধরনের চর্বি প্রদাহ বাড়াতে পারে যা নারিকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে।
নারিকেল তেল আপনার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারেঃমানুষের স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এ নারিকেল তেলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নারিকেল তেল কিছু ওষুধের শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারেঃবিটা ব্লকার নামের হস্তক্ষেপ করতে নারকেল তেলের কিছু ঔষধের শোষণে পারে।
নারিকেল তেল হজম করার কঠিন হতে পারেঃযেসব ব্যক্তি হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই নারিকেল তেল অনেক ক্ষতি করে কারণ এই তেল হজম করা কঠিন।
প্রাকৃতিক পণ্য ও স্বাস্থ্যকরের দিক থেকে নারিকেল তেলের অনেক ভূমিকা রয়েছে কিন্তু এর সাথে কিছু অসুবিধা রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ নারিকেল তেল খাবারে ব্যবহার করতে পছন্দ করে তবে তাদের আগে জেনে নেওয়া উচিত যে এটি তাদের জন্য সঠিক কিনা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি তাদের খাবারের ব্যবহার করা উচিত।

লেখকের মন্তব্য

এই আর্টিকেল থেকে নারিকেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করা হয়েছে যা আপনাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। তবে অতিরিক্ত নারিকেল খাওয়া সঠিক না কারণ প্রত্যেকটি খাবারেরই অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক হয়ে ওঠেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url